ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
Biz Barta :: বিজ বার্তা
Place your advertisement here

জীবন-জীবিকা পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ

বিজবার্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২০  


বন্ধ রয়েছে কারখানার উৎপাদন। স্বাভাবিক ভাবেই কমে গেছে মানুষের আয়। দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে বিরাট সংখ্যাক নিম্ন আয়ের মানুষ। মধ্যবিত্তও এখন কঠিন সংকটে, সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে এই শ্রেণীর বড় সংখ্যাক মানুষ। এমন কঠিন এক বাস্তবতায় সামনে এসেছে বাজেট। গুরুত্ব পাচ্ছে কোভিট-১৯ পরবর্তি জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তার দিক।

 

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম 'অর্থনৈতিক উত্তরণ এবং ভবিষ্যৎ পথপরিক্রম। অর্থনীতির পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব দিয়ে ১১ জুন জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা আয়-ব্যয়ের হিসেব তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের মূল ফোকাস থাকবে কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতি সচল করতে নীতি সহায়তা এবং দরিদ্র্য মানুষদের কিভাবে দ্রুত কর্মক্ষেত্রে যুক্ত করা যায় সেই কৌশলও তুলে ধরা হবে।

 

অর্থমন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মানুষের জীবন রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবেন। তিনি বলবেন, করোনাকালীন এই মহামারিতে এবারের সময়টা একেবারেই ভিন্ন। এটা গতানুগতির বাজেট নয়। এটা আপদকালিন বাজেট। এছাড়া মানুষের অন্ন বস্ত্র জোগানের জন্য দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল রাখার দিকটি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হবে। অর্থমন্ত্রী বলবেন, অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের মতো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে কাঙ্খিত অর্থনৈতিক ভিত রচনা করব

 

উৎপাদন স্থবিরতার কারণে বাড়ছে বেকারত্ব। নতুন কর্মসংস্থান নেই। ৮ ভাগের উপরে ওঠা জিডিপির প্রবৃদ্ধির সূচক এখন অর্ধেকেরও কম। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, সিপিডি মনে করে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে আড়াশ শতাংশ। অর্থাৎ গেল অর্থবছরের চেয়ে যা অর্ধেকেরও কম। একই সুরে কথা বলেছে ঋণ দাতা সংস্থা, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ। তাদের প্রক্ষেপনও ২ থেকে ৩ ভাগের মধ্যে থাকবে প্রবৃদ্ধির অংক। ফলে উৎপাদন না বাড়ানো গেলে বেকারত্ব লাগামহীন হবে। এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে।

 

কাজ না থাকায় বাড়ছে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মনে করে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে দেশে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ছিল ২০ ভাগ। মধ্যবিত্ত শ্রেণী ৭০ ভাগ এবং ধনী শ্রেণী ১০ ভাগ। আর লগডাউনের পর অর্থাৎ ৬৬ দিনে শ্রেণী কাঠামো পুরোটাই পাল্টে গেছে। এখন দেশে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ৪০ ভাগ। মধ্যবিত্ত শ্রেণী ৫০ ভাগ এবং ধনী শ্রেণী রয়েছে ১০ ভাগ। সংস্থাটি বলছে, ফেব্রেুয়ারী মাসের শেষের দিকে ১৭ কোটি মানুষের দেশে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ। আর দুই মাস পর সেই সংখ্যা ৬ কোটি ৮ লাখ। দুই মাসে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ। বলা হচ্ছে করোনার কারণে দেশে আয় বৈষম্যও বেড়েছে বিপদজনক মাত্রায়। সরকার মনে করে বিপুল সংখ্যাক মানুষকে কাজে ফেরানো গেলে কমে আসবে দারিদ্র্যের হার।

 

দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগে সুখবর নেই। কোভিড-১৯ পরবর্তী ধসে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে হবে। প্রতিবছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে ২০ লাখ তরুণ। কাঙ্খিত কাজের ব্যবস্থা না করা গেলে সংকট আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে চাঙ্গা করার বিকল্প নেই। একইভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তা যারা ব্যাংক ঋণের বাইরে রয়েছেন তাদেরকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। বৈদেশিক শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করতে হবে। যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন কোভিড-১৯ পরবর্তী তাদেরকে ফেরত পাঠাতে হবে। আর যাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না তাদের জন্য দেশেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

 

গবেষণা সংস্থা, পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কর্মক্ষেত্রে মানুষদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তার কৌশল হাতে নিতে হবে। আগামী বাজেটে সেই কর্মপরিকল্পনা থাকাটা জরুরী। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস এক সময় কমে যাবে, কিন্তু তারপর কতো দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ দ্রুত সময়ের মধ্যেই সামলে নিতে পারবে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে রোডম্যাপ প্রয়োজন। 


Place your advertisement here
Place your advertisement here
Place your advertisement here
Place your advertisement here