শনিবার   ১১ জানুয়ারি ২০২৫   পৌষ ২৭ ১৪৩১  

করজালে হাঁসফাঁস অবস্থা

বিজবার্তা রিপোর্ট :

বিজ বার্তা

প্রকাশিত : ০২:৫৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার

কার জাল পেতেছে সরকার। পণ্য  কিম্বা সেবা- সবক্ষেত্রেই এখন দিতে হবে বাড়তি কর। এতে মানুষের ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। আয় বা নতুন কর্মসংস্থানে স্বস্তি না এলেও খরচের চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ। মূলত সরকারের আয় বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত।

 

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। জারি করা হয়েছে এসংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ। অধ্যাদেশ দুটি হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।

 

রেস্তোরাঁয় বাড়বে ব্যয় :

রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট এক লাফে ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে এনবিআর। এখন দিতে হবে ১৫ শতাংশ। এত দিন এই হার ছিল ৫ শতাংশ। ১০০ টাকা খাবার ব্যয় করলে বাড়তি দিতে হবে ১৫ টাকা। এ ছাড়া মিষ্টির দোকানের ভ্যাটও সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। ফলে বেড়ে যাবে মিষ্টির দামও।

 

পোশাক কিনবেন, দাম বাড়বে :

ব্র্যান্ডের দোকান বা বিপণিবিতান থেকে তৈরি পোশাক কিনতে গেলেও গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। আগে এ খাতে ভ্যাট হার ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন তা করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। ব্র্যান্ডের পোশাক বা ব্র্যান্ড ব্যতীত পোশাকের দোকানউভয় ক্ষেত্রেই নতুন ভ্যাট হার প্রযোজ্য হবে।

 

মোবাইলে কথা বলা কমাতে হবে :

মোবাইলে একটু বেশি কথা বলছেন! তাহলে তার লাগাম টানতে হবে। সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মুঠোফোনে কথা বলার খরচ আগের চেয়ে বাড়বে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে। কারণ, মুঠোফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে।

 

বাড়বে টিস্যুর দাম :

পকেট টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, কিচেন টিস্যুসহ বিভিন্ন ধরনের টিস্যুর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে সরকার। আগে এই হার ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। ভ্যাট বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার ফলে টিস্যুর দাম বাড়তে পারে।

 

শিশুদের খাবারেও নজর :

ড্রিংক, বিস্কুট, জুস, ফলের রস, ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক, কেক (৩০০ টাকার বেশি দামের), আচার, টমেটো সস ও কেচাপ ইত্যাদি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে গুনতে হবে বেশি টাকা। এসব পণ্যভেদে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসিয়ে জারি করা হয়েছে অধ্যাদেশ।

 

বাড়বে এলপি গ্যাসের দাম :

বাসা বাড়ি, হোটেল কিম্বা শিল্প- সবখানেই গ্যাস সংকট। এসব জায়গায় ব্যবহার হয় এলপি গ্যাস। কিন্তু এই গ্যাসেও নজর দিয়েছে এনবিআর। এলপি গ্যাসের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। অন্যদিকে এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ২ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

 

বাড়বে সিগারেটের দাম :

মূল্যস্তর পরিবর্তন ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। বিভিন্ন মূল্যস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক সাড়ে ৬৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৭ শতাংশ।

 

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।

 

এছাড়া মধ্যমস্তরে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশ; উচ্চস্তরে ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ এবং অতি উচ্চস্তরের দাম ১৬০ থেকে ১৮৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। লাইম স্টোন ও ডলোমাইটে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে।

 

টার্নওভার করের আওতা বাড়বে :

বর্তমানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন হলে টার্নওভার কর দিতে হতো। এখন বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা হলেই টার্নওভার বা লেনদেন কর দিতে হবে।

 

আকাশপথ ভ্রমণে বাড়বে ব্যয় :

নতুন অধ্যাদেশে বাড়ানো হয়েছে আকাশ পথের ভ্রমণ ব্যয়। অর্থাৎ আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় আকাশপথে ভ্রমণে খরচও বাড়বে। অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে।

 

সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাইরে (এশিয়ার মধ্যে) ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করেছে এনবিআর।

 

আরও যেসব পণের শুল্ক-কর বাড়ল :

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তালিকায় থাকা অর্ধশতাধিক পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। শুল্ক-কর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আমদানি করা বাদাম, আম, কমলালেবু, আঙুর, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, যেকোনো ধরনের তাজা ফল, রং, ডিটারজেন্ট।

 

যেসব হোটেলে মদ বা মদ জাতীয় পানীয় সরবরাহ করা হয় সেসব হোটেল বা বারের বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

 

এছাড়া রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও একইভাবে মদ বা মদজাতীয় পণ্য সরবরাহ করা হলে-তার বিলের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

 

স্থানীয় উৎস বা দেশের মধ্যে উৎপাদিত রং, মদের বিল, পটেটো ফ্ল্যাকস, প্লাস্টিক ও মেটাল চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, সান গ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও তাতে ব্যবহৃত তেল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সিআর কয়েল, জিআই তারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডক ইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় পণ্য যোগানদাতা, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাবে সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।