‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বই বাজার থেকে সরানোর নিদের্শ
বিজবার্তা রিপোর্ট :
বিজ বার্তা
প্রকাশিত : ১১:১৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
ঢাকা : ইতিহাস ‘বিকৃতির’ কারণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটির সব কপি বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করেছেন আদালত। ওই বই যেন কোনোভাবেই আর বাজারে বা বইমেলায় না যায়, সে বিষয়েও আদালত সতর্ক থাকতে বলেছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ১২ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে ওই গ্রন্থের সম্পাদককে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যোবায়ের রহমান। এর আগে সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলো হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।
পরে ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন বলেন, আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করেছেন ১২ মার্চ। তিনি এসে বলবেন, কেন বঙ্গবন্ধুর ছবি পাওয়া যায়নি। কেন বঙ্গবন্ধুর ছবির পরিবর্তে মোনায়েম খান, আইয়ুব খানের ছবি ওখানে লাগানো হয়েছে। ব্যাখ্যা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে বইটির পুরাতন যত কপি আছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বলেছে। এ বই যেন বাজারে না ছাড়ে, মেলায় যেন না আসে। আদালত বলেছে ইতিহাস বিকৃতি অমার্জনীয় অপরাধ।
বইটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুইটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুইটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।
এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, নির্বাহী ব্যবস্থাপক এবং প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের ড. আবুল কালাম আজাদকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি-এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।