বরাদ্দের শীর্ষ দশে নেই কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাত
বিজবার্তা রিপোর্ট :
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২০
বেশি বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ দশের মধ্যে নেই কৃষি ও সামাজিক নিরাত্তামূলক খাত। আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আর স্বাভাবিকভাবেই বরাদ্দ বৃদ্ধির হারে সবচে এগিয়ে থাকবে স্বাস্থ্যসেবা খাত। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সেখানে আগের বছরের চেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩৪ ভাগ। তবে, বরাদ্দ কমতে পারে বিদ্যুত খাতে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, অবস্থা বিবেচনা করে কৃষি এবং সামাজিক নিরাপত্তামূলক খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন শীর্ষ দশ বরাদ্দের খাত বিবেচনা করলে এই দুই খাতই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ করোনা সংক্রমণে প্রান্তিক মানুষদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের চাপ বাড়বে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাটাও নিশ্চিত করা দরকার।
বাজেটে শীর্ষ দশ ব্যয় বরাদ্দের খাত বিশ্লেষন করে দেখাযায়, সরকারের বাকি সব মন্ত্রনালয় আর বিভাগের থেকে কাজের পরিধি বড়, তাই স্থানীয় সরকার বিভাগের ব্যয়ও বেশি। আর সে কারনেই আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আসছে বাজেটে সবচে বড় বরাদ্দটি থাকছে এই মন্ত্রনালয়ের জন্য। যার পরিমাণ ৩৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটের থেকে সাড়ে ৫ ভাগের মতো বেশি। চলতি অর্থবছরে পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।
বরাদ্দের দিক দিয়ে এরপরেই আছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়। ১৩ ভাগ বাড়িয়ে এবার এই মন্ত্রনালয়ের দেয়া হতে পারে, ৩৪ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩০ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। শীর্ষ বরাদ্দ প্রাপ্ত তালিকার তৃতীয় নাম মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। নতুন বছরে সেখানে সরকারের ব্যয় বাড়তে পারে, ১২ ভাগের মতো। চলতি অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।
অর্থ বরাদ্দের দিক দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রনালয়। যদিও সেখানে টাকার পরিমাণ বাড়ছে না বললেই চলে। আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে রাখা ছিল ২৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। তবে বড় বরাদ্দ বৃদ্ধি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবায়। ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা পাচ্ছে এই বিভাগ। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের চেয়ে যা ৩৪ ভাগ বেশি।
তবে বড় অংকের বরাদ্দ বৃদ্ধি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবায়। ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা পাচ্ছে এই বিভাগ। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের চেয়ে যা ৩৪ ভাগ বেশি। তবে, স্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য ব্যয় যোগ করে সার্বিক বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানায়, তিন বছর মেয়াদী স্বাস্থ্যখাত নিয়ে সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এখন পর্যন্ত পাওয়া হিসেব বলছে, বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জন্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। যা চলতি বছরের চেয়ে চার ভাগের মতো বেশি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয় ২৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা। তবে প্রায় ৫ ভাগের মতো কমে যাচ্ছে সরকারের অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকা বিদ্যুৎখাতের বরাদ্দ। আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
জননিরাপত্তায় দেয়া হতে পারে, সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। চলতি অর্থবছরে এই খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২১ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের দায়িত্বে থাকার কারণে বড় বরাদ্দ পাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়, প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা।
আসছে বাজেটে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়া ১০ মন্ত্রনালয় বিভাগের মধ্যে শেষ নাম রেলপথ। সেখানে বরাদ্দ বাড়ছে ১ ভাগের মতো। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে ১৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ দশ মন্ত্রনালয় এবং বিভাগের জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ধরে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ে খাদ্য উৎপাদনে আগামীতে কি ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই কৃষি খাতের জন্য নানান প্রণোদনা সুবিধা দিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, উৎপাদন স্থবিরতার কারণে বড় সংখ্যাক মানুষের আয় নেই। সামনে কর্মহীন মানুষদের আরও বিপর্যয় তৈরী হবে। সেই জন্য দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া মানুষদের সুরক্ষার দিকটি নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষি এবং সামাজিক নিরাপত্তমূলক খাতের বরাদ্দ যৌক্তিক করা দরকার।
১১ জুন জাতীয় সংসদে, আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
- চাল রপ্তানি বন্ধ করল ভারত
- ‘আমার অনেক সম্পদ আছে, আমি সাতজন জমিদারের নাতি’
- সংস্কার দেখতে ঢাকায় আইএমএফ কর্মকর্তা
- ‘অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ সামাল দেয়া গেছে’
- ‘শ্রীলঙ্কার পরিণতি হবে না’
- কর কাঠামোতে নানা ছাড়
- অর্থের টানাপড়েনেও বড় আকাঙ্খা
- বাজেট ২০২০-২১ : অর্থের টানাপড়েনেও বড় আকাঙ্খা
- ‘কপ-২৪’ সম্মেলনে হতাশা
- জীবন-জীবিকা পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ
- বরাদ্দের শীর্ষ দশে নেই কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাত
- বাজেট দিলেন কে কয়বার-
- ‘সুদ ব্যয় সাশ্রয়ে ব্যাংক ঋণ নির্ভর সরকার’
- সঞ্চয়পত্রের লেনদেন সপ্তাহে দুইদিন
- আর্থিক খাতে বড় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি